গিরগিটি প্রকৃতির অপূর্ব এক সৃষ্টি। বিধাতার সৃষ্টি যে কত অপরূপ এবং আশ্চার্যময় তার প্রকৃষ্ট উদাহরন এই গিরগিটি। নিজের দেহের রং পরিবর্তনের এক অকল্পনীয় ক্ষমতার অধিকারী এই গিরগিটি। গিরগিটি বেঁচে থাকার তাগিদেই প্রকৃতির নিয়মেই সেই দৃষ্টি নন্দন রং পরিবর্তনের খেলা খেলে। মানুষ কি সেই গিরগিটিদের মতোই বহুরূপি? বাহ্যিকভাবে হয়তোবা না কিন্তু মানুষের মনের ভিতরে যে রঙ্গের সংমিশ্রন আছে তা গিরগিটির তুলনায় কোন অংশেই হয়তোবা কম নয় এবং মানুষ তা গিরগিটির মতোই পরিবর্তন করতে সক্ষম।
এখন প্রশ্ন হলো মানুষের এই বং পরিবর্তন আমারা বা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কোন দৃষ্টিতে অবলোকন করে? হয়তোবা নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতেই অবলোকন করে থাকে। কারণ যখন কোন ব্যক্তিকে বলা হয় “ আপনিতো গিরগিটির মতোই রং পরিবর্তন করেন” তখন তাকে তাছিল্লো কিংবা ব্যঙ্গ করেই কথাটা বলা হয় এবং এই কথায় আপনি এবং আমি সকলেই অপমানিতবোধ করি।

Picture Taken By Myself
এখন প্রশ্ন হলো গিরগিটির মতো বং পরিবর্তন বলতে আমরা কি বুঝি এবং গিরগিটি স্বভাবের মানুষগুলো আমাদের সমাজের জন্য কতটুকু ভয়ানক? জৈনিক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রদলের সাথে জড়িত ছিলেন, তিনি হঠাৎ করেই সীদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্রলীগে যোগদান করেন এবং সেই ব্যক্তিকে আমারা এবং আমাদের সমাজ গিরিগিটি বলে আখ্যায়িত করি। কারণ সে নিজের স্বার্থের জন্য রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করেন। সে নিজের স্বার্থের জন্য পুনরায় ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে যোগ দিতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। ব্যক্তিস্বার্থে গিরগিটির চরিত্রধারন করে দল পরিবর্তন সমাজের মানুষের কাছে আপতদৃষ্টিতে মন্দ কিছু হলেও আমি এখানে খারাপের কিছু দেখতে পাই না। বরংচ আমি ইহার মাঝে বুদ্ধিমত্তা এবং বাস্তবতার যথাযথ প্রয়োগ দেখতে পাই। সামাজ, মানুষ যে যাই বলুক না কেন আমি আমার ব্যক্তি এবং দেশের স্বার্থে গিরগিটি হলে, খারাপ কি তাতে।
আমরা এবং আমাদের সমাজের মানুষগুলোর খুব বাজে একটা অভ্যাস আছে, আমরা প্রতিটি মানুষকেই আমাদের মতো করে বিচার করার চেষ্টা করি। আমারা কখনো কোন মানুষকে তার অবস্থান থেকে চিন্তা করার চেষ্টা করি না। যদি করতাম তা হলে হয়তো গিরগিটি নামের এই প্রাণীটির এতো বদনাম হতো না। প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব চিন্তায় বলিয়ান, প্রতিটি মানুষ চেষ্টা করে নিজের বর্তমান অবস্থাটাকে পরিবর্তন করে ভালো কিছু করার, আর এই ভালো কিছু করতে গিয়ে হয়তোবা কখনো কখনো গিরগিটির মতো রং পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়, আর এই বাধ্যবাধকতাকেই আমরা চুনকালি মেখে বদনাম করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আমাদের এই অনৈতিক ব্যস্ততা যেমন সেই ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসকে ভেঙ্গে চুড়ে ধুলিস্বাত করে দেয়, ঠিক তেমনি আমাদের সময় ও অপচয় হয়। আমাদেরকে এই সমালোচনার বেড়াজাল থেকে বেড় হয়ে আসতে হবে। সময়কে মূল্য দিতে শিখতে হবে। পরনিন্দা করা ত্যাগ করতে হবে। তবেই সমাজের কোন মানুষকে আমাদের গিরগিটি মনে হবে না।